1. সংক্ষেপে পোল্যান্ড পরিচিতিঃ
পোল্যান্ড ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম দেশ। ইউরোপের ভৌগোলিক দিক থেকে পোল্যান্ডের অবস্থান মধ্য ইউরোপে। এর প্রতিবেশি দেশ গুলি হলঃ জার্মানি, চেকপ্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ, লিতুয়ানিয়া এবং রাশিয়া। মূলত ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর পোল্যান্ড স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্ম প্রকাশ করে। এটি বিশ্বের ৩৪ তম জনবহুলদেশ (৩৮.৫ মিলিয়ন) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ষষ্ঠ জনবহুল সদস্য দেশ। হাঁ পোল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সেনজেন ও ন্যাটোভুক্ত দেশ। অফিসিয়াল ভাষা: পোলিশ, ক্যাপিটাল শহর: ওয়ারস্ব।
2. পোলিশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষা বেবস্থা কেমনঃ
পোলিশ ইউনিভার্সিটি গুলির সগৌরবের ৬৫০বছরের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। ইউনিভার্সিটির শিক্ষা বেবস্থা খুবই উন্নত। The Jagiellonian University in Kraków যা ১৩৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি হল মধ্য ইউরোপের দ্বিতীয় ইউনিভার্সিটি। বর্তমানে Warsaw University আন্তর্জাতিক আইটি রাঙ্কিং প্রথম স্থানে আছে। এছারা অন্যান্য ইউনিভার্সিটি গুলিও ভাল অবস্থানে আছে। পোলিশ ডিগ্রিধারিরা আন্তর্জাতিক নিয়োগদাতাদের কাছে যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশেষকরে ডাক্তার, প্রকৌশলী, স্থাপত্যবিদ এবং আইটি বিশেষজ্ঞগন।
3. উচ্চশিক্ষায় পোল্যান্ডকে নির্বাচন করার আগে কিছু ব্যাপার আপনাকে বিবেচনা করতে হবেঃ
i. পোলিশ ইউনিভার্সিটিতে থেকে কন্ডিসনাল অফার লেটার পাবার পর পেপার লিগেলাইজের জন্য আপানাকে পোল্যান্ড এম্বাসি ইন নিউ দিল্লি যেতে হবে, তারপর ভিসা ইন্টারভিউর জন্য আবার নিউ দিল্লি যেতে হবে, যেহেতু খুব দ্রুত সময়ে ভিসা প্রসেস হয় থাকে সেহেতু ইন্টারভিউর পর সেখানে কিছুদিন থেকে একে বারে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন। সুতরাং আপনাকে মোট ০২ ধফা নিউ দিল্লি যেতে হবে।
ii. পোল্যান্ড একটি মধ্যম আয়ের দেশ। এখানে পার্ট টাইম জব ফ্যাসিলিটি তেমন ভাল না। এমনিতেই পোল্যান্ডে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা অনেক বেশি ফলে কাজ না পাবার প্রভাবটা এর উপর বেশি থাকে। তাছারা পোলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ জানা না থাকলে কাজ পাওয়াটা অনেক কঠিন। ছাত্র অবস্থায় আপনি প্রতি বছরে শুধু মাত্র তিন মাস এবং সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা (সামার হলিডে জুলাই-সেপ্টেম্বর) কাজ করার অনুমতি পাবেন। আর যদি সারা বছর ধরে কাজ করতে চান, তাহলে আপনাকে পোল্যান্ডের টেম্পোরারি রেসিডেন্স কার্ড নিতে হবে। http://migrant.info.pl/Residence_card.html এই লিঙ্কে বিস্তারিত লিখা আছে।
4. পোল্যান্ডে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যঃ
পোলিশ বিশ্ববিদ্যালয় গুলি ব্যাচেলর, মাস্টার , পিইচডি প্রোগ্রামে প্রতি বছর সামার (ফেব্রুরারি) ও উইন্টার (অক্টোবর) সেমিস্টারের জন্য ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়। টিউসান ফী বছরে ২০০০-৩৫০০ ইউরো পর্যন্ত। এসএসসি, এইচএসসি, ব্যাচেলর এ ৫০% মার্কস থাকলে খুব সহজে অফার লেটার পাওয়া যায়।
i. লিগেলাইজেসান ও ট্রান্সলেসান নিয়ে কিছু কথাঃ
পোল্যান্ডে উচ্ছ শিক্ষার জন্য মূল এডুকেসানাল সার্টিফিকেটস লিগেলাইজ ও ট্রান্সলেসান করা লাগে। মূলত বাংলাদেশী ছাত্রদের জন্য এটা প্রধান বাধা। আমরা সচারচর দেখি অভারসিস ইউনিভার্সিটি গুলি এডমিসানের জন্য শুধুমাত্র নোটারাইজ সার্টিফিকেটস চায়। নোটারাইজ কপি দেখেই অফার লেটার ইস্যু করে। কিন্তু পোল্যান্ডের ক্ষেত্রে ফাইনাল অফার লেটার ইস্যু করার জন্য আপনার মূল এডুকেসানাল সার্টিফিকেটস বোর্ড/ইউনিভার্সিটিএডুকেসানফরেন মিনিস্ট্রি থেকে সত্তায়নের পর স্ব শরিরে পোল্যান্ড এম্বাসি ইন নিউ দিল্লিতে সকল মূল এডুকেসানাল সার্টিফিকেটস লেগেলাইজ করাতে হবে এবং তারসাথে সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট পোলিশ ল্যাঙ্গুয়েজে ট্রান্সলেট করতে হবে।
নোটঃ লেগেলাইজ ও ট্রান্সলেসানের এই প্রক্রিয়া ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেন দূতাবাস করতে পারেনা অথবা কুরিয়ারে দিল্লিতে পাঠিয়ে করা যায় না)। মাস্টার এপ্পলিকেন্টরা শুধু মূল ব্যাচেলর সার্টিফিকেট সত্তায়ন করবেন [আবার অনেক ক্ষেত্রে এসএসসি,এইচএসসি সহ করা লাগে, সেক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটির সাথে কথা বলে জেনে নিবেন]। লেগেলাইজের প্রতি পেইজের চার্জ ৫১০০রুপি ও ট্রান্সলেটের প্রতি পেইজের চার্জ ২৬০০রুপি।
ii.ভর্তি প্রক্রিয়াঃ
ধাপ ১: অনলাইন ফর্ম রেজিস্ট্রেসান।
ধাপ ২: পে এপ্পলিকেসান ফী ২০-৬০ ইউরো।
প্রাথমিক ভাবে কি কি ডকুমেন্টের স্ক্যান কপি ইমেইলে অথবা হার্ড(ফটোকপি) পাঠাতে হবে (মাস্টার এবং ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য):
a. এপ্পলিকেসান ফর্ম।
b. কভার লেটার।
c. ইউরো পাস সি ভি।
d. দুইটি রেফারেন্স লেটার।
e. পাসপোর্টের ফটোকপি।
f. অল একাডেমিক সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি।
g. স্টুডেন্ট আইডির ডকুমেন্ট(যেটা অনলাইন আপ্পলিকেসানের পর আপনি পাবেন)।
h. ইংলিশ প্রফিসিয়ান্সি সার্টিফিকেট (আইইএলটিএস ৫.৫০-৬.০০ অথবা প্রিভিয়াস ইংলিশ মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকসান অথবা আপনার একাডেমিক ভাল রেসাল্ট)।
ধাপ ৩: আপনার ইংলিশ প্রফিসিয়ান্সি ও একাডেমিক দক্ষতা যাচাই করার জন্য স্কাইপ ইন্টারভিউ নিবে। (অনেক ইউনিভার্সিটি এটা নেয় না)
ধাপ ৪: নির্ধারিত সময়ের পর এডমিসান কমিটি তাদের ডিসিসান আপনার ইমেইলে জানিয়ে দিবে।
ধাপ ৫: যদি আপনি মনোনীত হন, ইউনিভার্সিটি আপনাকে কন্ডিসনাল অফার লেটার ইস্যু করবে।
ধাপ ৬: ইউনিভার্সিটির অ্যাকাউন্টে ১ম বছর বা ১ম সেমিস্টারের টিউসান ফী প্রদান করতে হবে (ভিসা রিফিউসড হলে টিউসান ফী রিফান্ডেবল হবে)। ফাইনাল অফার লেটার পাবার জন্য কি কি ডকুমেন্টের স্ক্যান কপি ইউনিভার্সিটির ইমেইলে পাঠতে হবেঃ
i. মূল একাডেমিক সার্টিফিকেটের লিগেলাইজ কপি।
ii. পোলিশ ল্যাঙ্গুয়েজে ট্রান্সলেট করা সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট।
iii. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি।
iv. মেডিক্যাল সার্টিফিকেট।
নোটঃ অল্প কিছু ইউনিভার্সিটি আছে যারা প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র ফরেন মিনিস্ট্রি থেকে সত্তায়ন করা কপি গ্রহন করে ফাইনাল অফার লেটার ইস্যু করে, পরবর্তীতে পোল্যান্ডে যাওয়ার পর পোলিশ এম্বাসির লিগেলাইজ কপি ও পোলিশ ল্যাঙ্গুয়েজের ট্রান্সলেট কপি ইউনিভার্সিটিকে দিতে হবে, সেক্ষেত্রে আপনাকে ইউনিভার্সিটির সাথে কথা বলে কনফার্ম হতে হবে।
5. ভিসা সংক্রান্ত তথ্যঃ
ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার পাবার পর আপনাকে পোলিশ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের পূর্বে অবশ্যই newdelhi.amb.wk@msz.gov.plএই ইমেইলে যোগাযোগ করুন এবং জেনে নিন অতিরিক্ত কি কি ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে। আপনার ভিসার টাইপ হচ্ছে ন্যাশনাল ভিসা যাকে D টাইপ
ভিসা বলে।
http://www.e-konsulat.gov.pl/ এই সাইটে ন্যাশনাল ভিসা নিবন্ধন করুন, ওদের প্রদর্শিত তারিখ অনুযায়ী আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ নির্বাচন করুন। মনে রাখবেন ভিসা অনলাইন ফর্মটি ২০ মিনিটে পূরন করতে হবে। মনে করে নিবন্ধন পৃষ্ঠাটি প্রিন্ট করুন।
i. ভিসার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগবেঃ
a. অরিজিনাল পাসপোর্ট।
b. কমপ্লিট ভিসা আপ্পলিকেসান ফর্ম।
c. দুই কপি রঙ্গিন ছবি।
d. ভিসা ফী ৫১০০ রুপি। ( আপনি ইচ্ছা করলে এম্বাসিতে নগদে জমা দিতে পারেন অথবা ওঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে পারেন, জমার রশিদ আপ্পলিকেসান ফর্মে সংযুক্ত করবেন)।
e. ট্রাভেল মেডিকেল ইনস্যুরেন্স। ( জার্মান
এম্বাসি ইন ঢাকা অনুমোদিত যেকোনো বাংলাদেশী ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে কমপক্ষে ০৩ মাসের হেলথ ইনস্যুরেন্স করতে হবে)
f. একটি ভ্যালিড ওয়ান ওয়ে ফ্লাইট বুকিং দিতে হবে। (এটা করতে কোন টাকা পয়সা খরচ হয় না)
g. প্রুফ অব একমডেসান।(সর্বনিন্ম ০৬ মাসের জন্য কনফার্ম করতে হবে) h. অরিজিনাল অফার লেটারের হার্ড কপি। i. স্টুডেন্ট কার্ড।
j. লিগেলাইজ সার্টিফিকেটস।
k. ১৯২০০ PLN--> ৪৮০০ ইউরো, সর্বশেষ ০৬ মাসের ব্যাংক স্টেইটমেন্টে এই পরিমাণ টাকা দেখাতে হবে। (ব্যাংক স্টেইটমেন্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কতৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে) নোটঃ শুধুমাত্র একাডেমিক সার্টিফিকেটস লিগেলাইজ করাবেন বাকি সকল ডকুমেন্ট নোটারি করলেই চলবে।
ii. ভিসা ইন্টারভিউ প্রশ্নঃ
ভিসা অফিসার আপনাকে কিছু সময় ধরে প্রশ্ন করবে। মাথা ঠাণ্ডা রেখে ধিরে ধিরে স্পষ্ট ভাষায় আপনি তাঁর উত্তর দিবেন। এইজন্য আপনি গ্রুপে উল্লেখিত ভিসা ইন্টারভিউয়ে কেমন প্রশ্ন হতে পারে তা দেখতে পারেন।
http://on.fb.me/1jHY2kj
iii. ভিসা প্রসেস হতে কত দিল লাগবে ও ভিসা পাবার সম্ভবনা কেমনঃ
পোলিশ ভিসা প্রসেস হতে বড়জোর ১৪ দিন লাগে। যদি আপনি এম্বাসি রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী সকল ডকুমেন্ট সাবমিট করেন তাহলে ০৭ দিনের ভিতর ভিসা প্রসেস হবে। আপনার সকল ডকুমেন্ট যদি ঠিক থাকে এবং আপনি যদি ইউনিভার্সিটিতে সরাসরি মেইন কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন তাহলে ভিসা পাবেন এটা নিশ্চিত।
6. উপসংহারঃ
আশাকরি ডকুমেন্টটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবেএবং পোল্যান্ডের প্রত্যেকটি ধাপ কারও সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পন্ন করতে পারবেন। ধন্যবাদ।
Students ID card kunta r koi pabo oita?
ReplyDeletedocument/diploma number kunta kindly jodi ektu bolten?
ReplyDeletereally helpful blog
ReplyDelete